স্টাফ রিপোর্টারঃ সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার ৯নং সুরমা ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী সাইডিংঘাট। তিনটি ইউনিয়নের একমাত্র যোগাযোগস্থল উক্ত সাইডিংঘাট দিয়ে। এখানে রয়েছে ১টি প্রাইমারি স্কুল, ২টি মার্কেট, ৩টি স'মিল, ৪টি অটো রাইছ মিল, ১টি কবরস্থান, ৮-১০টা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় নদী ভাঙ্গনের ভয়াবহ চিত্র। এমন ভাবে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে নেই কোন দোকান মালিকদের নিরাপত্তা। ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান দু'এক দিনের মধ্যে নদী গর্ভে চলে যাবে।বিশেষ করে তিনটি ইউনিয়নের যোগাযোগের রাস্তা সাইডিংঘাট দিয়ে। ভাঙ্গনের সম্মুখীন উক্ত রাস্তা।
দোয়ারাবাজার উপজেলার নদী ভাঙন রোধে বাস্তবায়িত হয়েছে শত কোটি টাকার প্রকল্প। অথচ ভাঙন রোধে প্রকল্পের ছোঁয়া লাগেনি উপজেলা সদরের মাছিমপুর গ্রামে ও শরীফপুর গ্রামের সাইডিংঘাট বানিজ্যিক এলাকায় । নদী ভাঙন সমস্যা নতুন নয়। যুগ ধরেই চলছে। তবে, এক দশক ধরে ভাঙনের মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিগত সরকারের আমলে স্থানীয় সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও আশ্বাস ছাড়া আর কোনো কাজ হয়নি। ভাঙন প্রতিরোধে এখনই দ্রুত কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হলে পুরো গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
ষাটোর্ধ্ব মোজাহিদ মিয়া (৬৮)। চোখের সামনেই সুরমা নদীর গর্ভে বিলীন হতে দেখেছেন নিজের বসতভিটা, ফসলি জমি ও গাছপালা। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে পরপর তিনবার বসতঘর স্থানান্তর করতে হয়েছে তাকে। সুরমায় পৈতৃক বাড়ি, জমি-জমা সবকিছু হারিয়ে এখন মাথা গোঁজার শেষ সম্বল বাড়িটুকু নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় কাটছে তার। মোজাহিদ মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাদের পরিবারের তিন প্রজন্মের জমি-জমা, বসতবাড়ি সুরমা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের আর কোনো জমি নেই।’ দুলাল মিয়া বলেন, ‘নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি জমি-জমা হারিয়ে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার এখন উদ্বাস্তু। কেউ সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে উঠেছেন, কেউ অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন আবার কেউ এলাকার বাইরে থিতু হয়েছেন।’ শুধু মোজাহিদ এবং দুলাল মিয়াই নন, সুরমার ভাঙনে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার মাছিমপুরের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দারা প্রতিনিয়তই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান মিজু বলেন, ‘ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে একাধিকবার লিখিত ভাবে আবেদন করেছি। কিন্তু আমাদেরকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। নদী ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের কাজে আমাদের এলাকাকে বাদ দিয়ে অন্য এলাকায় কাজ করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রতি বছরই গ্রামের অন্তত দুই থেকে পাঁচটি করে পরিবার ঘর স্থানান্তর করছেন নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। ভাঙতে ভাঙতে এখন গ্রামের অর্ধেকই বিলীন হয়ে গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দোয়ারাবাজার উপজেলা শাখার আহ্বায়ক ও স্থানীয় বাসিন্দা এসার মিয়া বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দোয়ারাবাজারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শত কোটি টাকার নদী ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। অথচ সবচেয়ে বেশি ভাঙনকবলিত পশ্চিম ও পূর্ব মাছিমপুর গ্রামকে এই প্রকল্পের বাইরে রাখা হয়েছে শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে। বর্তমানে ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করেছে। ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানাই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দোয়ারাবাজারের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অ.দা) মো. শমশের আলী জানান, ‘সুরমা নদী ভাঙনকবল বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট প্রেরণ করা হয়েছে।